অনুসন্ধান    

Logo

 

ফ্রেন্ডশিপ এর সেবা সমূহ

Inclusive Citizenship Sector

সুশাসন সেক্টর সম্পর্কে আলোচনাঃ

মিশনঃ

এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে নাগরিকরা সুশাসন প্র্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের অধিকার গুলোকে সরকারী ও বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে বাধাহীনভাবে পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে।

 

লক্ষ্যঃ

স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধির একটি সমন্বিত পরিবেশ তৈরি করা যেখানে জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে, ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে, স্থানীয় ও জাতীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে সেবা গুলো প্রদান করা হয় তা পাওয়ার এবং স্বাবলম্বী অথর্নৈতিক নিভরশীলতা আনয়নে কাযর্কারী ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবে।

 

উদ্দেশ্যঃ

১. একটি শিক্ষাগত পাঠ্যক্রম চালু করা যেটি বয়স্ক ও শিশুদের মাঝে সরকার ব্যবস্থাপনা, আইন, মানবাধিকার ও শিশু অধিকার সমূহ সম্পর্কে জ্ঞান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করবে, এবং সুশাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিক ভুমিকা রাখবে।

২. আইনজীবি ও সমাজের লোকদের পারস্পারিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় পর্যায়ে প্যারালিগাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সালিশ ব্যবস্থাকে উন্নত করা এবং একই সাথে সরকারী আইনী সেবা গুলোকে কার্যাকারী করে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথকে সুগম করা।

৩. সুশাসন সর্ম্পকে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগনের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারী সেবা প্রদান, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো।

৪. আয় নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরনের জন্য অথর্নৈতিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা।

৫. সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং প্রকল্প কাজের তহবিল সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক একাধিক সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বমূলক সুসর্ম্পক তৈরি করতে সংস্থার সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

Health Sector

স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও জনসংখ্যা

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদীতীরবর্তী এলাকা এবং চরাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একাংশ বসবাস করে। এসব এলাকায় মৌলিক অবকাঠামোর অভাব, অপুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাব ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অনুপস্থিতিতে এখানকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যখাতে বিরাট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলেও স্বল্পব্যয়ের মানসম্পন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এখনও অধরাই রয়ে গেছে। সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা পরামর্শ এবং নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ পাওয়ার সুযোগও তাঁদের জন্য অত্যন্ত সীমিত।

ফ্রেন্ডশিপ বিশ্বাস করে স্বাস্থ্যসেবা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং চর ও নদীতীরবর্তী এলাকায় মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে একটি সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো বিকল্প নেই। এসব নদীতীরবর্তী ও চর এলাকায় যেহেতু স্থলভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো বাস্তব উপযোগিতা নেই সেহেতু ফ্রেন্ডশিপ এখানকার অধিবাসীদের জন্য ভাসমান হাসপাতাল, স্যাটেলাইট ক্লিনিক, ফ্রেন্ডশিপ স্বাস্থ্য মাঠকর্মী, জলবাহিত অ্যাম্বুলেন্স এবং বিশেষায়িত স্বাস্থ্যক্যাম্প সমন্বয়ে একটি সুসংযোজিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

ফ্রেন্ডশিপের প্রধান প্রকল্প লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ২০০২ সালের মার্চ মাসে উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে স্যাটেলাইট ক্লিনিক কর্মসূচি চালু করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আমাদের সাম্প্রতিকতম সংযোজন স্বাস্থ্য মাঠকর্মী কার্যক্রম। এ তিনটি কার্যক্রম মিলিয়ে ফ্রেন্ডশিপ স্বাস্থ্যসেবাকে চরাঞ্চলের প্রান্তিকতম অধিবাসীদের ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।

ভাসমান হাসপাতাল

বাংলাদেশের চরাঞ্চলে ১৯৯৮ সাল থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ফ্রেন্ডশিপের ধারণা হয়েছে যে স্থলভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা যদিও সাধারণভাবে আদর্শ ব্যবস্থা কিন জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদীনালার এই দেশে সেটি উপযুক্ত নয়। নদীগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চরগুলোর একটি থেকে আরেকটির এবং মূল ভূমি থেকে দূরত্বের কারণে স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রভিত্তিক সেবা অপ্রাসঙ্গিক বলেই মনে হয়েছে ফ্রেন্ডশিপের। এসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবেচনা করে রুনা খান ও ইভ্‌স মার বাংলাদেশের প্রথম ভাসমান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।

চরের অধিবাসীদের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ‘দ্য লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’ চালু করা হয় ২০০১ সালে। প্রকল্পটি তৈরি করা হয় এভাবে যাতে করে এটি মূল ভূমি এবং সেখানে যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার থেকে দূরে থাকা এবং চরের জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারে। প্রকল্পটি এক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল হয় যার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে চালু করা হয় ‘এমিরেট্‌স ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’। দু’টি হাসপাতালই রোগীদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতাল দু’টো পুরোপুরি ভ্রাম্যমান এবং কয়েক মাস অন্তর আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো এলাকায় নোঙর করে সেখানকার জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়।

 

এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল

ফ্রেন্ডশিপ এর দ্বিতীয় ভাসমান হাসপাতাল ‘এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’ (ইএফএইচ) চালু করে ২০০৮ সালের ২২শে নভেম্বর। জাহাজটি ফ্রেন্ডশিপের উপদেষ্টা ইভ্‌স মারের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়। এটি বাংলাদেশের স্টিল নির্মিত প্রথম একাধিক হাল বিশিষ্ট জাহাজ।

‘এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’ আগে ঢাকা জেলার সাভার থানার কাতলাপুর এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিত। এতে নিয়মিতভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। ‘লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’-এর মতো ‘এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’ও মাধ্যমিক স্তরের উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি মাসে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যক্যাম্পের আয়োজন করে যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চিকিৎসকবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। এই জাহাজটিকেও ফ্রেন্ডশিপ কর্তৃক নির্মিত কম্পিউটারভিত্তিক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার দিয়ে স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। এতে রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য কক্ষ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, দু’টি অপারেশন থিয়েটার, আট বেড বিশিষ্ট দু’টি ওয়ার্ড, পেডিয়াট্রিক ও গাইনিকোলোজি বিভাগ, একটি দন্তকক্ষ, একটি প্যাথোলজিকাল ল্যাবরেটরি, এক্সরে কক্ষ এবং একটি চক্ষুকক্ষ। জাহাজে অবস্থিত একটি ঔষধালয় থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়। জাহাজটিতে সর্ব্বোচ্চ ২৪ জন কর্মী ও আট জন চিকিৎসক অবস্থান করতে পারেন। জরুরি পরিস্থিতিতে জাহাজের ডেকে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগীকে রাখার মতো জায়গা রয়েছে।

‘এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’ মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত দন্ত, চক্ষু, নাক-কান-গলা সংক্রান- চিকিৎসা, প্যাথলজিকাল পরীক্ষা, রেডিওলজি এবং রেফারাল সেবা। ‘এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালটিতে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, একটি বিশেষ অপারেশন থিয়েটার এবং একটি পোস্টঅপারেটিভ ওয়ার্ড।

স্যাটেলাইট ক্লিনিক

চরের অধিবাসী বিশেষ করে নারী ও শিশুদের মৌলিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইট ক্লিনিক একটি কার্যকর ব্যবস্থা। স্যাটেলাইট ক্লিনিকটি একটি ছোট নৌকায় অবসি'ত এবং এতে একজন প্যারামেডিক, একজন স্বাস্থ্যশিক্ষাদানকারী এবং একজন মেডিকেল সহকারী বা নার্স (একজন চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে তাঁরা কাজ করেন) থাকেন যাঁরা ছোট ছোট প্রত্যন- চরে ঘুরে ঘুরে সেবা দেন। স্যাটেলাইট ক্লিনিকে কর্মরত দলগুলো অধিকাংশ চরের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়মিত সাপ্তাহিক ক্লিনিক বসিয়ে থাকে যা ঐ চরের অধিবাসীদের আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। জানানোর এ কাজটি করেন ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি মেডিক বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য মাঠকর্মী।    

স্যাটেলাইট ক্লিনিক টিকাদান, নিরাপদ মাতৃত্ব, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা ইত্যাদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে সীমিত আকারে প্যাথলজি পরীক্ষাও করা হয়। এছাড়া বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান, চরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার রোগীর তালিকা করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে রেফারও করে। স্যাটেলাইট কর্মীদের করা তালিকা খতিয়ে দেখে টিউমার অপারেশন বা কাটাঠোঁটের মতো বিশেষ কিছু চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্যক্যাম্প আয়োজন করা হয়। 

অতীতে স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কার্যকারিতা ভয়াবহ বন্যা এবং সিডর ও আইলার মতো ঘূর্ণিঝড়ে খুব ভালভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় আমতলি, শরণখোলা ও কুয়াকাটায় ১৫টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক খোলা হয়েছিল। সেসময় ফ্রেন্ডশিপ দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে সিডর দুর্গত ১৪,৮৩৫ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছিল।

 

ফ্রেন্ডশিপ স্যাটেলাইট ক্লিনিক যেসব সেবা দিয়ে থাকে:

 

ক. সাধারণ চিকিৎসা

   বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের সাধারণ চিকিৎসা এবং সীমিত আকারে নিরাময়মূলক চিকিৎসা করা হয়।

   শিশু চিকিৎসা দেওয়া হয় যার মধ্যে রয়েছে টিকাদান, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ বা এআরআই, ডায়রিয়া এবং সীমিত আকারে নিরাময়মূলক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

   গর্ভকালীন পরিচর্যা, প্রসব পরবর্তী সেবা, পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌনবাহিত বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ সহ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা  

খ. স্বাস্থ্যশিক্ষা/বিসিসি 

   দলীয় বৈঠক/স্বাস্থ্যশিক্ষার বৈঠক এবং ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ

গ. রেফারাল সেবা

   স্যাটেলাইট ক্লিনিক থেকে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, সরকারি কোনো হাসপাতাল/স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা এনজিও/ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিক বা হাসপাতালে

পরিবার পরিকল্পনা

 


 

 

 

 

পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও এ সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব, সেইসঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সহজলভ্য না হওয়া সব মিলিয়ে চর ও নদীতীর এলাকায় জন্মহার অত্যন্ত উঁচু। ফ্রেন্ডশিপের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতিগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবার পরিপল্পনা কর্মসূচি সংক্রান- ফ্রেন্ডশিপের সেবার মধ্যে আছে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও পরামর্শ প্রদান, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ (খাওয়ার বড়ি ও কনডম), এনএসভি, টিউবেকটমি, ইনজেকশন, নরপ্ল্যান্ট ও আইইউডি। এসব সামগ্রী যাতে সবসময় পাওয়া যায় সেজন্য ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি মেডিকের কাছে অস্ত্রোপচারবিহীন জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (খাওয়ার বড়ি ও কনডম) মজুদ রাখা হয়। এতে এলাকার মানুষ স্যাটেলাইট ক্লিনিকের অনুপস্থিতিতে তাঁদের কাছ থেকে এগুলো নিতে পারেন।

টিকাদান কর্মসূচি

চর ও নদীতীর এলাকায় শিশু মৃত্যু কমাতে ফ্রেন্ডশিপ শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বর্ধিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর মধ্য দিয়ে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে ফ্রেন্ডশিপ নারী ও শিশুদের এ কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ০-১ বছর বয়সী শিশু এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়।

 পুষ্টি কর্মসূচি

চরের অধিকাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার যার জন্য দারিদ্র্য মূলতঃ দায়ী হলেও পুষ্টি সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতার অভাব এ সমস্যাকে আরো প্রকট করেছে। ফ্রেন্ডশিপের পুষ্টি কর্মসূচির লক্ষ্য ৬ বছরের নিচে শিশু এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা। প্রতি মাসে ২৯২টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১০৪টি চরে অবস্থান করে এবং একেকটি ক্লিনিক ৫০-৬০টি শিশু এবং ১০ জন গর্ভবতী বা স-ন্যদানকারী মাকে পুষ্টিসেবা দিয়ে থাকে। এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যশিক্ষা/পরামর্শ, মায়েদের রান্না করে দেখানো, ছয় বছরের নিচে শিশুদের খাওয়ানো, বৃদ্ধি তদারকি এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা পালন।

আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করা

চরের জীবনযাত্রার অত্যন- নিম্নমানের জন্য যদিও বৈরী পরিবেশ এবং দারিদ্র্য মূলতঃ দায়ী তবে সুষ্ঠু শিক্ষার অভাবও একটি বড় কারণ। এ কারণে ফ্রেন্ডশিপ চরের নারী ও পুরুষকে উভয়কে দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আচরণ পরিবর্তনের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁদের সচেতন করে। মৃত্যু প্রতিরোধ ও রোগযন্ত্রণা হ্রাসে বাড়িতে রোগীর পরিচর্যা পদ্ধতি (বিশেষ করে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে), গর্ভবতী নারীর পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা (গোসল ও পায়খানা ব্যবহার বিষয়ে), পুষ্টির গুরুত্ব এবং জরুরি পরিসি'তি চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।

Education Sector

শিক্ষা

শিক্ষা  

শিক্ষা ফ্রেন্ডশিপের সমন্বিত উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম মূল উপাদান। আমাদের প্রতিষ্ঠান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে প্রাথমিক শিক্ষা, কিশোর বা বয়স্ক সাক্ষরতা যে পর্যায়েরই হোক না কেন যে কোনো কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসতে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। আয়বৃদ্ধি কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ বা সচেতনতা বৃদ্ধি যে কোনো কর্মসূচিরই প্রত্যাশিত ফলাফল অনেকগুণ বেড়ে যায় যদি এতে অংশগ্রহণকারী জনগোষ্ঠী সাক্ষর হন বা আরো বড় মাত্রায় শিক্ষিত হন।

প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশে যদিও অবৈতনিক তবু যাতায়াত সমস্যার কারণেই বহু শিশু মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতার বাইরে থেকে যায়। চর ও নদীতীরবর্তী এলাকায় কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর নয়। ফলে এসব এলাকার অধিকাংশ শিশু হয় কখনও বিদ্যালয়েই যায় না অথবা গেলেও অল্পকালের মধ্যেই ঝরে পড়ে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা

 

যদিও বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক কাছাকাছি বিদ্যালয় না থাকায় বহু শিশু মূলধারার শিক্ষা কর্মসূচীর বাইরে থেকে যায়। চর ও নদীতীর এলাকাগুলোতে পুরোপুরি সক্রিয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ শিশু হয় কোনোদিন বিদ্যালয়ে পা-ই রাখেনি নয়তো বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে।

২০০৫ সালের জুলাই মাসে ফ্রেন্ডশিপ তার শিক্ষা কর্মসূচী আরম্ভ করে। কর্মসূচীটির লক্ষ্য ছিল চর এলাকার শিশুদের মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করা এবং সেইসঙ্গে চরের অধিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। বর্তমানে শিক্ষা প্রদানের যে মডেলটি ব্যবহৃত হচ্ছে তারই ওপর ভিত্তি করে আমাদের প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য আমাদের কর্ম এলাকায় শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়াই শুধু নয়, বরং টেকসই এবং একাধিক জায়গায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার এমন একটি মডেল তৈরি করা।  চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা মাথায় রেখেই মডেলটি তৈরি করা হবে। একাজে আমাদের লক্ষ্য জনগোষ্ঠী চরাঞ্চল বিশেষ করে যমুনার চরগুলোর সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী। 

ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য এদেরকে অন্যান্য ধারার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আলাদা করেছে। এগুলো যে দুর্গম চর এলাকায় বিদ্যালয়ে যেতে অক্ষম শিশুদের জন্য স্থাপিত হয়েছে শুধু তাই না, বিদ্যালয়গুলো স্থাপনের আগে এসব এলাকায় জরিপ করে নিশ্চিত করে নেওয়া হয়েছে যে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী যথেষ্ট সংখ্যক শিশু রয়েছে যাতে করে বিদ্যালয়ে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে তার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের আগে স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়গুলো স্থাপনের জন্য আগে ঘর তৈরি করে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ঘরগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার ফলে চরের অধিবাসীদের অন্যত্র সরে যেতে হলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়টিকেও সরিয়ে নেওয়া যায়। বিদ্যালয়ের জমি সর্বত্র স্থানীয় অধিবাসীদের দান করা। দান করা জমি, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি, অংশীদারদের বার্ষিক সভা (ব্যবস্থাপনা কমিটি, অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্রদের অংশগ্রহণে) এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন চরে ভাঙন ধরলে স্কুলঘর সরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি প্রশিক্ষণ সবকিছু মিলিয়ে ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়কে চরের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে।

ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং ফ্রেন্ডশিপ কর্মীদলের মিলিত অংশগ্রহণে এবং সেখানে শিশুদের অভিভাবকসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং ইউনিয়ন পরিষদও সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে। স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়। বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রধান কৌশলগুলো হচ্ছে স্থানীয়দের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীকে সক্রিয় হতে সাহায্য করে এমন পাঠদান পদ্ধতি এবং নিয়মিত তদারকি ও ফলোআপ প্রশিক্ষণ।

আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক - উভয় ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমই সক্রিয় শিক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। স্থানীয়ভাবে নিযুক্তরা শিক্ষকরা পাঠদান করেন যাঁদের জন্য প্রথমে মাসব্যাপী ভিত্তিমূলক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। এরপর রয়েছে ফলোআপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফলোআপ প্রশিক্ষণ আবাসিকভাবে হয়ে থাকে। শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়করা যৌথভাবে পাঠ-পরিকল্পনা করেন, নতুন নতুন ভাবনার সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন, শিক্ষকরা তত্ত্বাবধায়কদের কাছে স্ব স্ব স্কুলে পাঠদান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেন, পাঠদান দক্ষতা বাড়ানোর অনুশীলন করেন ইত্যাদি।

বর্তমানে ফ্রেন্ডশিপ পরিচালিত ৫৮টি বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) ছাত্রছাত্রী শিশুশ্রেণী (প্লেগ্রুপ) থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। প্রতি ক্লাসে ৩০ জন করে ছাত্রছাত্রী এবং ছাত্রী ও ছাত্রের অনুপাত ৫৫:৪৫। প্রথম শ্রেণীতে পড়া এসব শিশুদের পরবর্তী ছয় বছরের জন্য শিক্ষাদান করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের বাংলা, ইংরেজী, অংক সহ অন্যান্য সাধারণ বিষয় পড়ানো হয় এবং এর সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষাও দেওয়া হয়। ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষা কার্যক্রমের লক্ষ্য সচেতন ও আত্মনির্ভর নাগরিক গড়ে তোলা। কেন্দ্রভিত্তিক পাঠদান পদ্ধতি অনুসরণ করার ফলে স্কুলের পর শিশুদের তেমন পড়ার প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর ছাত্রছাত্রীরা মূলধারার বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্ত্তত হয়।

ফ্রেন্ডশিপ প্রাথমিক স্কুল এবং ফ্রেন্ডশিপের স্যাটেলাইট স্কুলের তফাৎ এই যে স্যাটেলাইট স্কুলগুলো ব্যাচভিত্তিক অর্থাৎ একটি স্কুলে একটি ব্যাচই পাঁচ বছর পড়ে যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রথম শ্রেণীতে নতুন ব্যাচ ভর্তি করা হয়।

ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পাঠ শেখা সহ অন্যান্য কাজ খুব ভালভাবে সম্পন্ন করছে এবং স্থানীয় অধিবাসীরা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন। অন্যান্য চরে বিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তুলেছেন তাঁরা। প্রকল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান স্কুল দালানে আরো দু’টি ঘর যোগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে আরো বেশি ছাত্রছাত্রীকে জায়গা দেওয়া যায়।

 

বয়স্ক এবং কিশোর ব্যবহারিক সাক্ষরতা কর্মসূচি

 

চর এলাকার বহু অধিবাসী যেহেতু এখনও ব্যবহারিক পর্যায়ে পড়তে বা লিখতে পারেন না সেহেতু শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর জায়গা থেকে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০০৭ সালে ব্যবহারিক সাক্ষরতা কর্মসূচি নামে আমাদের কার্যক্রমটি যাত্রা শুরু করে গাইবান্ধা জেলার ১০টি চরে ১০টি পাঠদান কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে। কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যার সময় পাঠদান করা হয় যাতে শিক্ষার্থীদের জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। এ কর্মসূচি অন্যান্য চরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক নারী ও পুরুষ এবং কিশোর এই তিন ধরনের শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত। আট মাসের পাঠক্রম শেষ করার পর বয়স্ক শিক্ষার্থীরা ব্যবসায়িক লেনদেনের দৈনন্দিন হিসাব রাখা, চিঠি লেখা, লিখিত চিঠি/চিরকুট পড়া ইত্যাদি ধরনের দৈনন্দিন কাজ আরো সহজভাবে করতে পারেন। কিশোর-কিশোরীরা পাঠক্রম শেষ করার পর সাধারণতঃ বৃত্তিমূলক শিক্ষায় প্রবেশ করে। ব্যবহারিক সাক্ষরতার পাঠক্রম শেষ না করে কিশোর-কিশোরীরা বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমে ভর্তি হতে পারে না। বর্তমানে মোট ২১টি কেন্দ্রে এই কর্মসূচি চলছে। প্রতি কেন্দ্রে ২০ জন করে বয়স্ক শিক্ষার্থী এবং একটি কেন্দ্র কিশোর শিক্ষার্থীদের জন্য।

বয়স্ক সাক্ষরতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণতঃ ফ্রেন্ডশিপের এফসিডিসি কর্মসূচির সদস্য। তাঁদের মধ্যে কিছু আবার অন্য জনগোষ্ঠীর সদস্য। কিশোর শিক্ষার্থীরা সাধারণতঃ এফসিডিসি সদস্যদের সন্তান।

ফ্রেন্ডশিপের বয়স্ক সাক্ষরতা কর্মসূচি চরের অধিবাসীদের সাক্ষরতার হার এবং সার্বিক সচেতনতা বাড়াবে এবং তাঁদের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহী হবেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমটিও এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে তা তাঁদের আয় বাড়াতে এবং এর ফলে দারিদ্র্য কমাতে সহায়ক হয়।   

 

জীবন মান উন্নয়ন

 

ফ্রেন্ডশিপের গ্রামীণ সামাজিক শিক্ষা কর্মসূচিটি আরেকটি বৃহত্তর প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে যার নাম ‘‘জীবন মান উন্নয়ন’’। বেসরকারী সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর সহযোগিতায় প্রকল্পটি পরিচালিত হবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য চরের মানুষের অধিকারভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের সামর্থ্য বাড়ানো। কর্মসূচিটির লক্ষ্য-জনগোষ্ঠীকে এজন্য দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নাগরিক জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। 

ফ্রেন্ডশিপ চর উন্নয়ন কমিটিগুলোর (এফসিডি) আদলে গড়া সমাজভিত্তিক বিভিন্ন দল (সিডিসি) তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল প্রণয়ন করবে। সমাজভিত্তিক দলগুলোর উন্নয়ন করা হবে ভিত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে। এর ফলে দলের সদস্যরা মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার, সুশাসন এবং নিজেদের অধিকার বিষয়ে দাবি সংগঠিত করার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন ও সচেতন হবেন।  

প্রকল্পটি মানবাধিকারভিত্তিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরকারি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করার মাধ্যমে সরকার ও অন্যান্য বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করবে। সামগ্রিক দিক থেকে এ কার্যক্রম সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও দুর্গম পল্লীর জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ এবং অধিকার সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার সুযোগ বাড়াবে যা চরের মানুষের দারিদ্র্য মোচন করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করবে।

‘‘জীবন মান উন্নয়ন’’ শীর্ষক প্রকল্পটি দু’বছর ব্যাপী। প্রথম বছর ১০টি চরের প্রায় এক লাখ অধিবাসী উপকৃত হবেন এবং দ্বিতীয় বছরে আরো ১০টি চরের আরো এক লাখ মানুষ এর আওতায় আসবেন। ফলে প্রকল্প শেষে ২০টি চরের প্রায় দু’লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে উপকৃত হবেন।

প্রকল্পটি গঠনের দিক থেকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন যা এটিকে বিভিন্নমুখী বিষয়কে একটি সূত্রে সমন্বিত করে, একটি বৃহত্তর ও সাধারণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কার্যক্রম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে - আর সে লক্ষ্যটি হলো চরের মানুষের জীবনের মানোন্নয়ন। 

Climate Change Adaptation and Disaster Management Sector

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে খরার প্রাবল্য বাড়বে, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জলসঙ্কট দেখা দেবে, বাড়বে ঘূর্ণিঝড় ও উপকূলীয় বন্যা। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সঙ্কট তৈরি করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। আশঙ্কা করা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ ভূমি বর্ষাকালীন বন্যাকবলিত হবে। বর্তমানে দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ ভূমি প্রতিবছর বর্ষায় বন্যায় তলিয়ে যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একাধিক দিক থেকে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রেন্ডশিপ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একটি সুসমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং পদ্ধতি অবলম্বন করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কৌশল এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।    

জরুরি ত্রাণ

যখনই কোনো দুর্যোগ ঘটে সেটি বন্যাই হোক আর ঘূর্ণিঝড়, ফ্রেন্ডশিপের একটি কর্মীদল তৎক্ষণাৎ দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে অন্যান্য সংস্থা ও দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজে নেমে পড়ে এবং দুর্যোগের শিকার ব্যক্তিদের কাছে যত দ্রুত সম্ভব সাহায্য পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রাধিকারগুলো হচ্ছে আশ্রয়, নিরাপদ জল এবং তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা। কতজন মানুষ আহত এবং কতগুলো পরিবারের ত্রাণ প্রয়োজন তার একটি দ্রুত জরিপ করে নিয়ে খাদ্য এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হয়। জরুরি স্বাস্থ্যক্যাম্প স্থাপন করে আমরা সেখানে দেশ ও বিদেশের প্যারামেডিক এবং ডাক্তারদের সমন্বিতভাবে হাজির করে থাকি যাঁরা দুর্যোগে আহতদের গুণগত মানের সেবা প্রদান করেন।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং প্রস্ত্ততি

 

কোনো জনগোষ্ঠী দুর্যোগ সামলে ওঠার পরের কাজ হচ্ছে তাঁরা যাতে পরের দুর্যোগটি মোকাবেলা করতে পারেন তার প্রস্ত্ততি নেওয়া। ফ্রেন্ডশিপ দুর্যোগ অনুমান এবং জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় প্রস্ত্ততি গ্রহণে সাহায্য করে থাকে। উত্তরের চরগুলোতে যেখানে অধিবাসীরা নিশ্চিত জানেন যে তাঁরা পরবর্তী বন্যায় ঘরবাড়ি হারাবেনই তাঁদের জন্য ফ্রেন্ডশিপ অনেকটা ব্যাংকের কাজ করে। দুর্যোগকালীন সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাঁরা নিজেদের কিছু সঞ্চয় ফ্রেন্ডশিপের কাছে গচ্ছিত রাখেন। ফ্রেন্ডশিপের শিক্ষা কর্মসূচিতে পরিবেশ বিজ্ঞানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য পাঠ্য করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণ, কখন এসব দুর্যোগ আসে, এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হয়। 

 

দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে কমিউনিটি কর্তৃক ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি উন্নয়ন কমিটির আদলে স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে গঠিত দলগুলো ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ ধরনের বৈঠকে জোর দেওয়া হয় পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়ের ওপর কারণ এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য কেবল তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রদান নয় বরং আমাদেরও তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে যেহেতু তাঁরাই স্থানীয় জ্ঞানের ভান্ডার।

ঘূর্ণিঝড় সিডর

 

Cyclone Sidr

২০০৭ সালের ১৬ই নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে ভয়াবহ আঘাত হানে। এলাকাটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক হাজার মানুষ মারা যান এবং সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়, অবকাঠামো এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

দুর্যোগের পর পরই দক্ষিণের পাঁচটি জেলায় সিডরদুর্গতদের জন্য ফ্রেন্ডশিপ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করে। এসব জেলায় ফ্রেন্ডশিপ ছয়টি জরুরি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে ১৪,৮৭২ জন রোগীকে চিকিৎসা দেয়। দুর্যোগের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাতটি জেলায় খাদ্য ও জরুরি দ্রব্য সরবরাহ শুরু করা হয় এবং ৯,৭৮,৭৫০ জনকে খাদ্য পৌঁছানো হয়। ছয় সদস্যের একটি পরিবার ছয় দিন খেতে পারবে এমন পরিমাণের খাবার ১৮,০০০ পরিবারের জন্য সরবরাহ করা হয়। এমন অনেক এলাকা ছিল যেখানে ফ্রেন্ডশিপই প্রথম খাদ্য ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিল।

সিডর আঘাতের তৃতীয় দিনে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে দুর্যোগ এলাকায় পাঁচটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়। ফ্রান্স থেকে ছয় সদস্যের ডাক্তার ও নার্সের একটি দলও উড়ে আসে দুর্যোগ এলাকায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। ফ্রেন্ডশিপ থেকে দুর্যোগ আক্রান্ত সবচেয়ে অসহায় পরিবারগুলোর জন্য ঘর তুলে দেওয়া হয় এবং ৩০০ স্যানিটারি পায়খানা নির্মাণ করা হয়। আক্রান্ত গ্রামগুলোতে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহের জন্য ১২টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। সিডরদুর্গত এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে ফ্রেন্ডশিপ এই ত্রাণ কর্মকান্ডে অংশ নেয়।

Sustainable Economic Development Sector

টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন   

 

 

চরের মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্যতম। চরের মাটির অধিকাংশ চাষের অযোগ্য, পরিবারগুলোর গড় সদস্য আটজন এবং পরিবারপিছু দিনপ্রতি আয় ষাট টাকার মতো। চরবাসীদের অবর্ণনীয় অবস্থার উন্নয়নে ফ্রেন্ডশিপ সেখানে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে যার মধ্যে আছে সংগঠিত হওয়া, সাক্ষরতা শিক্ষা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়, বিকল্প উপার্জনের সুযোগ বাড়াতে আয়মূলক কার্যক্রম এবং আয়মূলক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সুদমুক্ত ঋণ।

প্রকল্পটির লক্ষ্য উপার্জনের উৎস ও সুযোগ বৃদ্ধি, বর্তমান জীবিকার উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও উপার্জনের নতুন পথ খুঁজে বের করা, চরবাসীদের জন্য বাজার সুবিধা বৃদ্ধি, দুর্যোগ মোকাবেলায় উপযুক্ত প্রস্ত্ততি গ্রহণ যাতে করে পুঁজি ও সম্পদের ক্ষতি যথাসম্ভব এড়ানো যায়।    

আমাদের লক্ষ্য জনগোষ্ঠী প্রান্তিকতম জনগোষ্ঠী বিশেষ করে চর এলাকার বন্যাদুর্গত নারী জনগোষ্ঠী।

 

 

এফসিডিসি-এর মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক আয় বৃদ্ধি 

 

এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য কৃষিভিত্তিক আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডের সুযোগ সৃষ্টি করে চরের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান। ফ্রেন্ডশিপের দারিদ্র্য বিমোচন মডেলে ঝুঁকি ভাগাভাগি করে নেওয়ার ঐতিহ্যগত পদ্ধতিটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ক্ষুদ্রবীমা ও সঞ্চয় কার্যক্রমও। এ মডেলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ফ্রেন্ডশিপ ৩-৪ বছরের মধ্যে লক্ষ্য জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সরে যেতে পারে যে সময়ের মধ্যে ঐ জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে ১০০% লাভ করবে।

কৃষি সহায়তার মধ্যে রয়েছে ভুট্টা উৎপাদন ও সবজি বাগান করার ক্ষেত্রে সহায়তা, গরু বিতরণ, সেচপাম্প বসানো এবং চরবাসীরা যাতে আরো বেশি করে বাজারে প্রবেশের সুযোগ পান সেজন্য রয়েছে সৌর প্যানেল, পরিবহনের জন্য নৌকা এবং মোবাইল ফোন সহায়তা।

গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরে ফ্রেন্ডশিপ কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যেগুলোর ব্যবস্থাপনা সমিতির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা উপকারভোগীদের এসব সমিতি গঠিত হয়েছে। এসব সমিতিকে আমরা নাম দিয়েছি ফ্রেন্ডশিপ চর উন্নয়ন কমিটি (এফসিডিসি)।

 

বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড

ফ্রেন্ডশিপ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং আয়বৃদ্ধিমূলক একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে তাঁতের কাজ, কাপড় রং করা ও ছাপানোর কাজ। ফ্রেন্ডশিপ এর কাজের শুরু থেকেই বুঝতে পেরেছিল চরের নারীদের মধ্যে আয়মূলক কর্মকান্ডের প্রবল চাহিদা রয়েছে যা মেটানোর সুযোগ তাঁরা পাচ্ছেন না। ফ্রেন্ডশিপ এও উপলব্ধি করেছিল যে চরের নারীরা উঁচু মানের পণ্য প্রস্ত্তত করতে সক্ষম কিন্তু যেটি করার সুযোগ তাঁদের নেই এবং এসব চরে নিবেদিতপ্রাণ এবং দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে সক্ষম দক্ষ এবং উৎপাদনশীল শ্রমশক্তি যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে।

ফ্রেন্ডশিপ তার প্রথম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থাপন করে যমুনা নদীর সিদাই চরে। এলাকার সুবিধাবঞ্চিত এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে প্রশিক্ষণার্থী নারী ও কিশোরীদের নির্বাচন করা হয়। দলটিকে তাঁত বোনা, রং করা এবং ছাপাইয়ের ওপর মানসম্মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁরা এখনও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন তবে এরই মধ্যে চমৎকার মানের সুতি কাপড়ের স্কার্ফ, কাপড় ও চাদর তৈরি করতে শিখে গেছেন। এসব পণ্য সাধারণভাবে বিক্রি করা হচ্ছে এবং যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কাঁচা মাল কেনা হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণার্থীরা আয়মূলক যেসব কাজ করছেন সেখানে কাজে লাগানো হচ্ছে।


 

মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ
জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম ।

মোঃ মিনহাজুল ইসলাম
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সাবিক ), কুড়িগ্রাম ।

NGO সমূহ